এড. শফিকুল আলম মনা

দেশে জাতীয়তাবাদী আদর্শের একমাত্র স্থান বিএনপি

মোহাম্মদ মিলন

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা এখন খুলনা মহানগর বিএনপির অভিভাবক। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। বর্ণাঢ্য এই রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

খুলনা গেজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, জাগো দল থেকে শুরু করে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পক্ষে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতি করছি। যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বিশ্বাস করে তাদের একমাত্র জায়গা হল বিএনপি। বিএনপি ছাড়া জাতীয়তাবাদী আদর্শের মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার অন্য কোন স্থান বাংলাদেশে নেই। আমরা এই কারণে গর্বিত যে আমাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষক। স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবের সরকারই তাকে বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিল। যেটা মুক্তিযুদ্ধে জীবিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ খেতাব। স্বাধীনতার চেতনাকে সবচেয়ে বেশি ধারণ করি। এই দলে যে পরিমাণে মুক্তিযোদ্ধা আছে, সেই পরিমাণ আওয়ামী লীগেও নেই। এই দেশের উন্নয়ন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য বিএনপি হচ্ছে একমাত্র প্লাটফর্ম। যে প্লাটফর্মের মানুষ কখনও আপোষ করেনি। বেগম খালেদা জিয়া যদি আপোষ করতেন তাহলে তার জেলখাটা লাগতো না। এই বয়সে তিনি নানান রকম রোগে আক্রান্ত হতেন না।

আমাদের নেতা তারেক রহমান যদি আপোষ করতেন তাহলে অনেক আগেই দেশে আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবং জিয়া পরিবার বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সংকটে এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। সেটা ১৯৭১ সালে হোক, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হোক আর স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে হোক প্রতিটা ক্ষেত্রে জিয়া পরিবার বাংলাদেশের সামনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

মনা বলেন, শুরু থেকে এই পর্যন্ত বিএনপিকে নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রত্যেকটি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগনের সান্নিধ্যে বিএনপি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অল্প বয়সে যুবদল করেছি। এখন সেই বয়স নেই। রাজনীতি আর ব্যক্তি যেটিই হোক এখন পড়ন্ত বেলায় আছি। এখনও যে শহিদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে রেখেছি এটাই বড় বিষয়। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একাই লড়েছেন। লড়াই করে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছিলেন। যেটা ১৯৯০ সালে জনগন ম্যান্ডেট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছিল। আগামীতেও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিএনপির সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭-এ বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন করেন। এই সময়ে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল-জাগো এর অঙ্গসংগঠন জাগো যুবদলের খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন শফিকুল আলম মনা। একই বছরে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের ব্যানারে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। এই দলে অঙ্গীভূত হওয়ার লক্ষ্যে ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে জাগোদলের বর্ধিত সভায় দলটি বিলুপ্ত করে নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন শফিকুল আলম মনাকে জেলা যুবদলের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত করা হয়।

১৯৭৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হন। ১৯৯০ সালে এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৪ সালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এবং ১৯৯৭ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন জেলার সভাপতি হন অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা। ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর নগর বিএনপরি আহবায়ক এবং ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নেতাকর্মীদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৭২ সালে খুলনার সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি এবং পরবর্তীতে বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৯ সালে খুলনার এমএম সিটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে সিটি- ল’ কলেজ থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৩ সালের বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৪ সালে খুলনা বারে যোগদান করেন। তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডে ২ বারের নির্বাচিত কমিশনার ছিলেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন